প্ৰণব মুখোপাধ্যায়কে কোনমতেই রাষ্ট্রপতি হতে দিতে চান নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তখন দ্বিতীয় ইউপিএ জমানা চলছে। জ্বালানী তেল এবং রান্নার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে মতানৈক্যের জেরে জোট ছেড়ে দিয়েছেন তৃণমূল (All India Trinamool Congress)। সেই সময়েই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং দলের দীর্ঘদিনের সৈনিক প্রণব মুখোপাধ্যায়কে (Pranab Mukherjee) রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করেন কংগ্রেস সভানেত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। যা একেবারেই অপছন্দ ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata banerjee)।

এই নিয়ে প্রবল বিরোধিতা করে ঘাস ফুল শিবির। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিরোধিতা করে দলীয় মুখপত্র ‘জাগোবাংলা’ পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছিল, “আমরা স্তম্ভিত, আমরা লজ্জিত।” বেশ কিছু দিন ধরে এই নিয়ে বিতর্ক চলেছিল। তবে তৃণমূলের অনেক বিধায়ক এবং নেতা প্রণববাবুকেই রাষ্ট্রপতি পদে দেখার জন্য আগ্রহী ছিলেন। সেই বিষয়টিও মাথায় ছিল দলনেত্রীর।

যদিও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির পক্ষ থেকেও নিজেদের মতো করে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদের জন্য। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়াম সিং যাদব সাংবাদিক সম্মেলন করে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তিন জনের নাম ঘোষণা করেন। কৃষ্ণা বসু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মনমোহন সিং-এর নাম ওই পদের জন্য ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী ও সপা নেতা।

উল্লেখযোগ্য বিষয়ে হচ্ছে, এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বড় ঝটকা দিয়েছিলেন নেতাজি মুলায়ম সিং যাদব। আচমকা তিনি কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করে দেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই যা জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধাক্কা দেয় তৃণমূলকে। সেই সঙ্গে দলের একাধিক বিধায়কের প্রণববাবুর প্রতি সমর্থন ছিলই। যা পরে আরও বিপত্তির ঘটাতে পারতো।

সেই সকল বিষয় মাথায় রেখে বঙ্গতনয় প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সমর্থন জানান তৃণমূল নেত্রী মমতা। সেই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এই সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের কষ্ট হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই বিরোধিতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই ‘বাঙালি কাঁকড়ার জাত’ উপমা দিয়ে তৃণমূলনেত্রীকে কটাক্ষও করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কলেজের বা পাড়ার ক্লাবের নির্বাচনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল মমতার বিরুদ্ধে।

যদিও মমতার বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ ছিল না প্রণববাবুর। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে ভগ্নি সমতুল মমতা একসময়ে নিশ্চয় তাঁর প্রিয় প্রণবদা’কে সমর্থন জানাবেন। এবং তিনি ভুল প্রমাণিত হননি।